একাত্তরের নভেম্বরে নৌ-বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত বাহিনীর অধীনে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সূচনা হয়েছিল। সাতক্ষীরা ও খুলনায় পাকিস্তানী বাহিনীর থেকে দখল করে নেয়া ৬ টি ক্ষুদ্র ইঞ্জিনচালিত নৌযান নিয়ে ৯ নভেম্বর মঙ্গলবার ১৯৭১ ‘বঙ্গবন্ধু নৌ বহরে’র উদ্বোধন করা হয়েছিল।

 

নৌ কমান্ডো এবং বাঙালি নাবিকদের তৎপরতায় সুন্দরবন ও মংলা বন্দরের নিকটবর্তী এলাকা থেকে, সেপ্টেম্বর মাসে বেশকিছু যাত্রীবাহী লঞ্চ নিয়ে আসা হয়েছিল ভারতের চব্বিশ পরগনার হাসনাবাদে প্রতিষ্ঠিত Naval Detachment-এ, এটির মূল উদ্যোক্তা ছিলেন নৌবাহিনীর দুর্ধর্ষ কম্যান্ডো লিডিং সিম্যান বেগ। তিনি ক্যাপ্টেন বেগ নামে সুপরিচিত ছিলেন। সেখানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন লেফটেন্যান্ট বদরে আলম (যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাঁকে সম্মানসূচক লেফটেন্যান্ট পদে ভূষিত করা হয়েছিল)। এসব লঞ্চ সংস্কার করে ভারী মেশিনগান স্থাপনের পর যুদ্ধের উপযোগী করে তোলা হয়েছিল। এসব নৌ-যান পরবর্তী সময়ে সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণ সীমান্তে টহল দিয়েছে বলে জানা যায়।

বঙ্গবন্ধু নৌ বহরের ৬ টি জাহাজের নাম যথাক্রমেঃ

 

👉 বঙ্গবীর

👉 বঙ্গবিদ্যুৎ

👉 বঙ্গশৌর্য

👉 বঙ্গবজ্র

👉 বঙ্গশক্তি এবং

👉 বঙ্গশার্দূল

 

স্মর্তব্য, দৌলতপ‍ুর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে খুলনার দক্ষিণাঞ্চল এবং সমগ্র বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা নিয়ে গঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টর। ভারতের বসিরহাটের নিকটবর্তী টাকিতে ছিলো এই সেক্টরের কমান্ডিং বেজ। সেক্টরের প্রথম কম্যান্ডার ছিলেন মেজর জলিল।

 

তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘সীমাহীন সমর’ -এ উল্লেখ করেছেন,

 

‘আমার অধীনস্থ লঞ্চগুলি শীগগিরই ‘বাংলাদেশ নেভি’ হিসেবে পরিচিত হলো। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আমার নৌ বাহিনীতে ৬ টি মোটর লঞ্চ জোগাড় করা হয়। এগুলো শত্রূবাহিনীর থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল। শুধু যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য নিয়োজিত রাখার চাইতে এগুলোকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করে গানবোটের কায়দায় ব্যবহার করা ভালো। সর্বাধিনায়ক কর্নেল ওসমানীর কাছে আমার পরিকল্পনা জানাতেই তৎক্ষণাৎ রাজী হয়ে গেলেন। তারপর অধিকায়ক মুখার্জীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভারতীয় বাহিনীকে বুঝিয়ে ৬ টি লঞ্চের জন্য ৫০ টি ব্রাউনিং বিমানবিধ্বংসী মেশিনগান নিয়ে এলাম। হালকা মেশিনগান ও ছোট ধরনের অস্ত্রশস্ত্র চালানোর জন্য প্রতি লঞ্চে দশজন করে নাবিক মোতায়েন করলাম।’

 

আড়াই মিনিটব্যাপী এই ভিডিও ক্লিপে বঙ্গবন্ধু নৌবহরের অন্যতম গানবোট ‘বঙ্গশক্তি’ ও আরেকটি (নাম দেখা যাচ্ছেনা) গানবোট দৃশ্যমান। রয়টার্সের বিবরণ অনুসারে, ২৬ নভেম্বর এই দু’টি গানবোট সাতক্ষীরার মুক্তাঞ্চল থেকে অস্ত্র ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে খুলনার পথে রওনা দেয়। মুক্তাঞ্চলে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়তে দেখা যায় এসময়।

 

 

(তথ্য কৃতজ্ঞতাঃ নৌ কম্যান্ডো মরহুম মোঃ খলিলুর রহমান

‘মুক্তিযুদ্ধে নৌ-অভিযান’ – কম্যান্ডো মোঃ খলিলুর রহমান

‘সীমাহীন সমর’ – মেজর মোহম্মদ আব্দুল জলিল)