২ এপ্রিল শুক্রবার, ১৯৭১ সাল।
এদিন ভোররাতে ঢাকার উপকণ্ঠে জিঞ্জিরায় ঝাঁপিয়ে পরেছিল হিংস্র পাকিস্তানী হার্মাদেরা। আনুমানিক ৫ থেকে ৭ হাজার মানুষ এদিন নির্মমভাবে নিহত হন। অগণিত মানুষের অযুত স্বপ্ন ও ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটে এদিন।
তেমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনার কথা বলছি আজ ৪৯ বছর পর, পুনর্বার স্মরণ করিয়ে দেয়ার অভিপ্রায়ে। ছবির ছোট্ট মানুষটির নাম মধুমিতা মজুমদার মিতা। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের অন্যতম পুরোধা পন্ডিত বারীণ মজুমদার এবং তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতজ্ঞ-শিক্ষক ইলা মজুমদারের প্রথম সন্তান।
একাত্তরে ১০ বছর বয়সী মধুমিতা জিঞ্জিরার শুভাঢ্যা এলাকায়, পাকিস্তানীদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ হতে সপরিবারে পালাবার সময় দলছুট হয়ে যান। মানুষটিকে আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি। একাত্তরের অগণিত মর্মান্তিক স্মৃতির মাঝে এটিও একটি।
১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি দৈনিক বাংলায় ‘এখনো ফেরেনি যারা’ শিরোনামে প্রকাশিত কলামে খোঁজ আহবান এবং পুরষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়।
যা নিম্নরূপঃ
”গত ২রা এপ্রিল সকাল সাতটায় মধুমিতা মজুমদার (মিতু) পাক সেনাদের বর্বর আক্রমণের সময় জিনজিরার শুভাঢ্যা গ্রাম থেকে পালানোর সময় নিখোঁজ হয়েছে। তার বয়স দশ বছর, গায়ের রং শ্যামলা, লম্বা গড়নের পাতলা দেহ। সে কে.জি টুতে পড়ে। মধুমিতা মজুমদারকে যদি কেউ নিম্ন ঠিকানায় পৌঁছে দিতে পারেন, তাকে পুরস্কৃত করা হবে। গোলযোগের সময় মধুমিতা মজুমদারের বিকল্প নাম দেওয়া হয়েছিল ফরিদা ও তার পিতার নাম মঞ্জুর হোসেন। সংবাদ পাঠাবার ঠিকানা :শ্রী বারীণ মজুমদার, অধ্যক্ষ, সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়, ২৮, সেগুনবাগিচা, ঢাকা-২।”
আজ পর্যন্ত মধুমিতা মজুমদারকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে কেউ আসেননি। নিখোঁজের তালিকায় তাঁর নামটি স্থায়ীরূপ লাভ করেছে হয়তো। তবুও, ব্যাখ্যার অতীত অনেক কিছুই ঘটে মাটির পৃথিবীতে।
যদি, তেমন কিছু আশা করি আজ ৫০ বছর পর। খুব কি বেশি চাওয়া হবে ?